সংবাদদাতা : পাবনা সুজানগর উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণকৃত উন্নতমানের সার ও বীজের কৃষি প্রণোদনা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমনকি তাদের আত্মীয় স্বজন ও বেওয়ারিশদের নাম ব্যবহার করে প্রণোদনা হরিলুট করা হয় বলে অভিযোগ বলে জানা গেছে।
প্রণোদনা বাস্তবায়নে নির্ধারিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রতি বছর এভাবে হরিলুটের ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, সেই সাথে রবি মৌসুমে ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের নেয়া মহৎ পরিকল্পনাও হুমকিতে পড়েছে।
সুত্রমতে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের কৃষকদের জন্য পেঁয়াজ, গম, ধান, ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও খেসারি মিলে মোট ৭টি ফসলের উন্নতমানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত এই উপজেলার জন্য উল্লেখ্যযোগ্য শীতকালীন পেঁয়াজের বীজ। উচ্চমূল্যের বীজের আড়াই শতাধিক কৃষকদের তালিকার অধিকাংশই চেয়ারম্যান ও তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং মেম্বারদের নাম ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়। কিছু কৃষকদের নাম তালিকাতে থাকলেও তারা জানেন না এই বীজ ও সার বিতরণের বিষয়টি।
কৃষি অফিসের দেয়া পেঁয়াজের বীজের তালিকায় দেখা গেছে, উপজেলার হাটখালি ইউনিয়ননের চেয়ারম্যানেরই দুটি মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে, রয়েছেন চেয়ারম্যানের ২ ভাইসহ ৫/৭ জন আত্মীয় এবং বাকিরা ইউপি সদস্য। ভায়না ইউনিয়নের তালিকায় সবাই ইউপি সদস্য।
মানিকহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম শফি বলেন ২৫টি প্রণোদনার মধ্যে ৪টি আমি রাখছি, ৫টি উপজেলা পরিষদে ১টি ইউপি সচিব ও বাকিগুলো ইউপি সদস্যদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছি। তালিকায় নাম থাকা কৃষক পায় নাই জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
এভাবে উপজেলার সব ইউনিয়নের প্রণোদনাই ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়। দুই-একজন কৃষকদের নাম তালিকায় থাকলেও তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এই সব বীজের পরিমাণ ১ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি পর্যন্ত। সার দেয়া হয় ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। এইসব বীজ ও সারের মধ্যে পেঁয়াজের প্রায় ৮ লাখ, গম ১৭ লাখ টাকা, সরিষা ১১ লাখ টাকাসহ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার প্রণোদনা রয়েছে।
আরও জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এই কমিটির সভাপতি, উপজেলা কৃষি অফিসার সদস্য সচিব এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কমিটির উপদেষ্টা। তালিকা প্রণনয়ন করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিভাবে এমন হরিলুট করা হলো সে বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে হাটখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ খান বলেন, তালিকা আমরাই করেছি। সে হয়তো বীজ তুলে নিয়ে এসে আরেক জনকে দিয়েছেন। কিন্তু কোনও অনিয়ম করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে তালিকাটা করে দেয়া হয় এজন্য যাচাই বাছাই করা হয় না। এখানে আমার মোবাইল নাম্বারটা কীভাবে গেল আমি জানি না। আমার ভাইয়েরা যদি কৃষক হয়ে থাকেন তাহলে তো দোষের কিছু নেই। তারা কৃষক হিসেবেই প্রণোদনা পেয়েছেন।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, ‘ইউপি সদস্যসহ অনেকের থেকে প্রভাবিত হয়ে তারা বাধ্য হয়ে এমন তালিকা করেছেন। এসব প্রণোদনা উপজেলা পরিষদ থেকে দেয়া হয়, সেখান থেকেও একাধিক জনের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে বাধ্য করা হয় এবং প্রণোদনা দেয়ার সময় সেখান থেকেই রেখে দেয়া হয়।’
এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে ইউনিয়ন থেকে তালিকাটা তৈরি করা হয়। এরপর উপজেলা কমিটি এটির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। অনিয়মের অভিযোগ এখনও আমরা পাইনি। যদি কোনও অভিযোগ আসে বা আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সার ও বীজের কৃষি প্রণোদনা হরিলুটের অভিযোগ আপনাদের কাছেই প্রথম শুনছি। যদি সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করে থাকে অথবা আপনাদের কাছে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্য দেন, অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।