নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার সাঁথিয়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। আর এই হামলার সাথে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় জামাত বিএনপির সন্ত্রীরা। বর্তমানে তারা জামাত বিএনপি থেকে সরকারী দলে যোগদান করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার সময় তারা পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তান লাল মিয়া ও মিজানুর রহমাসসহ তার চাচাতো ভাই তোসলিম মোল্লাকে। এই হামলার ঘটনায় ৬দিন পরে ৮ জনকে আসামি করে সাঁথিয়া থানায় মামলা দায়ের হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ২৪ সেপ্টেম্বার আনুমানিক রাত ৮টার দিকে দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের বসত বাড়িতে হামলা চালায় ৮/১০ জনের স্থানীয় সন্ত্রাসীবাহীনি। সম্প্রতি সাঁথিয়ায় নৌকা বাইচের আয়োজন দেখতে গিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে কথাকাটাকাটির জের ধরে এই হামলা চালালো হয়। হামলার সময় নেতৃত্র দিয়েছেন এলাকার চিহ্নিত জামাত সমর্থীত শফিক, সাগর, ফিরোজ, মাজেদসহ আরো অনেকে। ঘটনার ৬ দিন পরে ৩০ সেপ্টেম্ব ৮ জনকে আসামি করে পাবনার সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মিজানুর রহমান।
বয়সের ভারে নূয়ে পরা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মাষ্টারে স্ত্রী মোছা. গোলেজা খাতুন (৭০)। সেদিনের সেই সন্ত্রাসী হামলায় বেশ ভয়ে ও আতঙ্ক গ্রস্থ রয়েছেন। কখন যেনো আবারো হামলা হয় তার বসত বাড়িতে। কখন আবার ওই সকল সন্ত্রাসীরা তার সন্তাদের উপরে হামলা করে। তিনি প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান। মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন পাবনার সাথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের সোনাডাঙ্গী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন। ২০১৯ সালের ০১ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরন করেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ধোপাদহ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে এই হামলা চালিয়ে তার দুই ছেলেকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে লুট করে নিয়ে যায় বাড়িতে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী। হামলার সময় বাড়ির বিভিন্ন ঘড়ে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে রেখে যায় তারা।
কথা হয় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মা গোলেজা খাতুনও ছেলের বউ লাভলী খাতুন বলেন, খুবই কষ্টো পাইছি সন্তানের উপরে যখন অস্ত্র ধরে তখন কোন মায়েই ঠিক থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর ওই জামাত বিএনপির লোকজন হামলা করবি এটা মানে নেয়া যায়না। এরা পূর্ব থেকেই আমাদের পরিবারে সাথে শত্রুতা করে আসছে। আমরা বিচার চাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
মামলার বাদী হামলা স্বীকার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পূর্ব থেকেই তারা আমাদের সাথে শত্রুতা করে আসছে। হামলার পরে তারা আমাদের হাসপাতালে যেতে দেয়নি থানাতে যেতে দেয়নি। এই হামলার ঘটনাকে অন্য খাতে নেয়ার জন্য তারা আমাদের নামে থানাতে অভিযোগ দিয়েছেন। স্বাাধীনতার এতো বছর পর জামায়াত শিবিরের পৃষ্টপোষকতায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা করেছে। এই হামলার মধ্যদিয়ে তারা কৌশলে সরকার দলীয় লোকজনের সাথে মিশে প্রতিশোধ নিচ্ছে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি।
এই হামলার ঘটনায় পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, নৌকা বাইচ খেলা কেন্দ্র করে গ্রামের তুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বসত বাড়িতে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। সেই বাড়িটি প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার বসত বাড়ি। ওই এলাকা আমাদের বিশেষ নজর দাড়িতে রয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে সং¤িøষ্ঠ থানাতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তারা সকলেই পলাতক রয়েছে। তাদের ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সাঁথিয়া উপজেলা ধোপাদহ গ্রামটি জামাত অধ্যশিত এলাকা। এই এলাকাতেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী ফাঁসির মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী মতিউর রহমান নিজামি। সেই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সারির যোদ্ধা সাবেক কমান্ডার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মাষ্টার। এলাকার জামাত বিএনপির সন্ত্রাসীরা বর্তমানে সরকারদলীয় লোকজনের সাথে যোগদান করে দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে নানা ভাবে অত্যাচার করে আসছেন। তবে সম্প্রতি নৌকা বাইচ খেলা দেখতে গিয়ে প্রতিপক্ষের গ্রুপের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। খেলা দেখে বাড়িতে চলে অসলে সন্ত্রাসীরা স্বদলবলে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা চালায়। এখন তারা এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা জন্য নানা ভাবে হুমকি প্রদান করছে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।