পাবনা প্রতিনিধি : মামলা জটিলতায় বার বার আটকে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পাবনার ইছামতি নদী অবশেষে শহরের লাইব্রেরী বাজার ব্রিজ পয়েন্টে খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
শনিবার (৩ মে) সকালে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম পায়রা উড়িয়ে খনন কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। এদিকে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ইছামিত নদী দখলমুক্ত ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করণে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং স্থানীয় জেলা শহরের ইছামতি নদী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন, পথসভা ও সমাবেশের মাধ্যমে এই মহৎ কাজের পাশে রয়েছে। এই লক্ষ্যে সকাল থেকে আন্দোলনকারী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ লাইব্রেরী বাজার পয়েন্টে জমা হতে থাকেন।
নদী খনন কাজ গতিশীল করতে রোদের তাপদহের মাধ্যেও মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করতে বিপুল সংখ্যক লোকসমাগম হয় শহরের নদী কাটা পয়েন্টে। সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এবং এমএস আহাদ বিল্ডার্সের কর্মকর্তাগণ তাঁদের স্বাগত জানান। তাঁরা মামলার জটিলতা আছে কিনা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং শেষে ইছামতি নদী খনন কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করে পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার সভাপতি এস এম মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস, দৈনিক জীবন কথা সম্পাদক আবু সালেহ মো আব্দুল্লাহ, প্রেসক্লাব পাবনার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম রঞ্জু, ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ হাবিবুর রহমান হাবিব, রিভারাইন পিপল পাবনার সভাপতি ও নদী গবেষক ড. মনছুর আলম, ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার প্রচার সম্পাদক বাংলাদেশের খবরের জেলা প্রতিনিধি ও বেলা’র নেটওয়ার্ক সদস্য শফিক আল কামাল, সর্বসদস্য ইমাম গাযযালী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সুরাইয়া সুলতানা, দোতলা কৃষির উদ্ভাবক কৃষিবিদ জাফর সাদিক, এসোর্ট স্পেসালাইজ হাসপাতালের পরিচালক রোটা. জালাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, মাছরাঙ্গা টিভির জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম রিজু, এটিএন নিউজ জেলা প্রতিনিধি রিজভি জয়, কবি আজিজা পারভীন, কবি করুণা নাসরিন, লারর্নাস অর্গানাইজেশন পাবনার নির্হাহী পরিচালক জাহানারা বেগম বিজলি, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শিশির ইসলাম, কবি আলমগীর কবির হৃদয়, নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া খাতুন, ভোরের দর্পণের জেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন রাশেদ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুধীজন।
সূত্র মতে জানা গেছে, বর্তমানে ১২১ টি এস্কেভেটর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা ইছামতি খনন কাজ করছে। ইতোমধ্যে মন্ডলপাড়া থেকে ভাঁড়ারা অঞ্চল ডিমার্গেশন শেষ হওয়ায় সেখানেও খনন কাজ ধরা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস আহাদ বিল্ডার্স খনন কাজ করছে এবং তত্ত্বাবধান করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। কাজের শেষ মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩১ মার্চ ২০২৭ খ্রি. পর্যন্ত। খনন কাজের অগ্রগতি হয়েছে সর্বমোট জগন্নাথপুর থেকে ফকিরপুর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এবং ভাঁড়ারা থেকে কুলুনিয়া পর্যন্ত মোট ৬ কিলোমিটার। অর্থাৎ সবমিলে ৩২ কিলোমিটার। আজ শনিবার তারা পাবনা শহরের মধ্যে খনন কাজ শুরু করেছেন। তবে মূল শহরে ইছামতি নদী নিয়ে নি¤œ আদালতে ৯৮টি মামলার জটিলতা থাকায় কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। বিশ^স্ত সূত্র হতে জানা যায়, ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনা বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও মানবন্ধন পরবর্তী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণায় বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের প্রেক্ষিতে গত ০৯ এপ্রিল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাহ্ফুজা আক্তার ইছামতি পর্যবেক্ষণে আসেন এবং তিনি স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করেন। শেষে শহরে নি¤œ আদালতে মামলা নিরসনে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অ্যাভোকেট নিয়েগের তাগাদা দিয়ে যান। সে প্রেক্ষিতে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জোর্জকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আবুল হোসেন জোয়ার্দারকে মোট ৯৮টি মামলা নিষ্পিত্তির জন্য অ্যাভোকেট নিয়োগ করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ থাকায় আশা করা যাচ্ছে নিম্ন আদালতের মামলাগুলো খুব দ্রুতই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। এদিকে শহরের ম-লপাড়া থেকে চরশিবরামপুর, কোষাখালী, ভোমরা কোল হয়ে রূপপুর চ্যানেলে জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষের দিকে।