লোকসানের মুখে ঈশ্বরদীর পোল্ট্রি খামারিরা

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : পোল্ট্রির খাবারের দাম বৃদ্ধিতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েকশো পোল্ট্রি খামারি লোকসানে পড়েছেন। গত বছরের করোনার ধাক্কা সামাল দিতে অনেকেই লোন করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরো বিপাকে পড়েছেন। অনেক পোল্ট্রি খামারি এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশাতে চলে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার পোল্ট্রি খামারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বছর দুয়েক আগেও যেসকল পোল্ট্রি খামার বড় ছিলো সেগুলো ছোট করে ফেলেছেন খামারিরা। অনেকেই পোল্ট্রি খামারের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে অন্য পেশাতে না যেতে পেরে এখনো লোকসান গুনছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্র জানা যায়, উপজেলায় ৩৫২ টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে। এসব খামারে লেয়ার মুরগির সংখ্যা পাঁচ লাখের উপরে। সোনালি মুরগির খামার রয়েছে ৩০২টি যেখানে মুরগীর সংখ্যা দেড় লাখের মত। এবং ব্রয়ালার মুরগির খামার ২০৮ টি যাতে মুরগীর সংখ্যা দুই লক্ষ।
দাশুড়িয়া এলাকার খামারী শাকিল হোসেন বলেন, আমার তিন হাজার মুরগীর সেড আছে। প্রতিটি মুরগি মাসে ২২-২৫টি ডিম দেয়। প্রতি ডিম ৬-৭ টাকা বিক্রি করতে হয়। তিনি আরও বলেন, কিন্তু একটি ডিম উৎপাদন করতে বর্তমানে বিদ্যুৎ, লেবার ও খাবারসহ খরচ হচ্ছে প্রায় ৯ টাকা। ডিমের উৎপাদন ভালো হলেও খাবারের দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পরতে হচ্ছে।
উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের লেয়ার মুরগির খামারি মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমার বর্তমানে দুই হাজার লেয়ার মুরগীর বাচ্চা রয়েছে। এই বাচ্চা ডিম পারার উপযোগি হতে প্রতি মুরগী প্রতি খরচ হবে সাতশত থেকে সাড়ে সাতশত টাকা। মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধির ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনমাস আগেও ফিডের বস্তা প্রতি দাম ছিল ২১৭০টাকা যা বর্তমানে বেড়ে ২৪৯০ টাকা। চলতি বছর প্রতি বস্তায় গুণতে হচ্ছে ৩২০ টাকা বেশি।
একই এলাকার মুরগির খামারি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমার খামারে এক হাজার একশত লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিটি মুরগির জন্য খাবার বাবদ ২৫০-২৭০ টাকা খরচ হয় মাসে। ৪-৫ বছর আগেও খাবারের মুল্য এক হাজার দুইশত টাকা ছিলো বস্তা প্রতি। খামারিদের ডিলারদের কাছ থেকে খাবার কিনতে হয়। এখানে অনেক সময় সিন্ডিকেট কাজ করে। এদিকে বাজারে ডিম বিক্রি করতে গেলে কম দাম পাওয়া যায়। অথচ ডিম কিনতে গেলেই দাম বেড়ে যায়। ডিমের যে সঠিক মূল্য রয়েছে তা পাচ্ছি না। কেউ লোকসানের মুখে পরে জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করেছে।
উপজেলার বেশিরভাগ খামারি বলেন, কাঁচামালের ভ্যাট কমিয়ে আনাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল পোল্ট্রি খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে নজরদারি করলে হয়তো তারা উপকৃত হবেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, সারা দেশেই একই অবস্থা, ফিডের দাম বৃদ্ধিতে খামারিদের লাভটা কমে গেছে। খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এটা সত্যি। তিনি আরও বলেন সরকার ফিডের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে খামারীদের অনুদান প্রদান করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *