পাবনা (সাঁথিয়া) প্রতিনিধি : পাবনার সাঁথিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা ও দিগন্ত সমাজ কল্যান সমিতি (DSKS) পরিচালক শামসুন্নাহার মুক্তার বিরুদ্ধে সাঁথিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শামসুন্নাহার মুক্তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য।
সূত্রেমতে জানা যায়, শামসুন্নাহার মুক্তা দিগন্ত সমাজ কল্যান সমিতি (DSKS) নামের এনজিওর রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে সাঁথিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে তার নিজ বাড়িতে অফিস বানান। সে নিজেই পরিচালক এবং সবকিছু নিজেই পরিচালনা করেন। নামে মাত্র আছে তার পরিচালনা কমিটি এবং কয়েকজন কর্মচারী। কোনমতে চলছিলো তার এনজিও। সৈরাচারি সরকারের শাসনামলে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর কাছের মানুষ হয়ে শুরু হয় তার উত্থান। ফ্যাসিস্টদের সাথে মিলেমিশে বাগিয়ে নেয় অনেক বড় বড় প্রকল্প। সেইসব প্রকল্পের, নামে মাত্র খাতা-কলমে কাজ দেখিয়ে লুটে নেয় কোটি কোটি টাকা। সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য। শামসুন্নাহার মুক্তা ২০২৩ খ্রি. ১২ ডিসেম্বর এ কে এম আজাদ রহমানের কাছ থেকে ৯৯ লাখ টাকার জমি কিনেছে। সাঁথিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিস যার দলিল নং ৯৭৫০/২০২৩ খ্রি. সাঁথিয়া পৌরসভার বোয়ালমারী মৌজার জে এল নং ১১৪, আর এস দাগ নং ১২৯৭, জমির পরিমান ৯ শতাংশ। ২০২৩ খ্রি., ২৭ আগষ্ট মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে থেকে ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনেছে। সাঁথিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিস যার দলিল নং ৭৪২২/২০২৩ খ্রি.,সাঁথিয়া পৌরসভার বোয়ালমারী মৌজার জে এল নং ১১৪, আর এস দাগ নং ১২৯১, জামির পরিমান ৭ শতাংশ। ২০২০ খ্রি. ২ জানুয়ারি সাঁথিয়া বাজার মোঃ আব্দুল মুন্নাফের কাছে থেকে তিন তলা বাড়িসহ সাড়ে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে নগদ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে। রেজিস্ট্রারি জটিলতা বাজলে সাঁথিয়া থানায় জিডি করে শামছুন নাহার মুক্তা যার নং-২৬১, তারিখ -০৬/০৮/২০২২ খ্রি. এবং পাবনা বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন যার স্মারক নং-৫৯৮০(৩) তারিখ-০৭/০৯/২০২২ খ্রি. । সাঁথিয়া বাজারের মোঃ জুয়েলকে ব্যবসায়িক কাজে শামসুন্নাহার মুক্তা নগদ ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেন। জুয়েল টাকা ফেরত না দিতে পারলে ২০২২ খ্রি. ১০ আগস্ট ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ইসলামী ব্যাংক সাঁথিয়া শাখার মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৮০১১ এর একটি চেক দেন শামসুন্নাহার মুক্তার নামে। যার চেক নং MSQ -৪২০৩৫২২৫। জুয়েলের একাউন্টে কোন টাকা না থাকায় শামসুন্নাহার মুক্তা বাদী হয়ে মোহাম্মদ জুয়েলের নামে পাবনা জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-৫ চেক ডিজঅনার একটি মামলা করেন। যার নং- CR ৩৪৩/২০২২ (সাঁথিয়া)।
সাঁথিয়া বাজারের মোছাঃ জাহানারা খাতুনের ব্যবসায়িক কাজে শামসুন্নাহার মুক্তা নগদ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেন। মোছাঃ জাহানারা খাতুন টাকা ফেরত না দিতে পারলে ২০২২ খ্রি. ১৪ আগস্ট তারিখে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, সাঁথিয়া শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং ৩৮০৬০১০০১০৫৮০ একটি চেক দেন শামসুন্নাহার মুক্তার নামে। যার চেক নং SNLS-৯২০৯০৫৩। তার একাউন্টে কোন টাকা না থাকায় শামসুন্নাহার মুক্তা বাদী হয়ে মোছাঃ জাহানারা খাতুনের নামে পাবনা জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং -৫ চেক ডিজঅনার একটি মামলা করেন। যার নং- CR ৩৪৭/২০২২ (সাঁথিয়া)। শামসুন্নাহার মুক্তার নিজ নামে ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদের হিসেব পাওয়া গেছে। এছাড়া নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। পাবনা জেলায় দিগন্ত সমাজ কল্যাণ সমিতির সহায়ক বাস্তবায়নে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচী (PEDP-4), সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ এর একটি শিক্ষা প্রকল্প চলছে। এটাতেও তার ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা অনেকেই বলেন, কয়েক বছর আগেও এই শামসুন্নাহার মুক্তার সংসার চলতো কোনমতে। এই সাড়ে ১৫ বছর সৈরাচারি সরকারের দোসরদের সাথে মিশে সে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সাঁথিয়ায় কেউ জমি বিক্রি করতে চাইলে সে উচ্চ মুল্য দিয়ে জমি কিনে নেয়। বিভিন্ন ব্যাংকে তার কোটি কোটি টাকা থাকার কথা শুনা যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবি তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেই কোটি কোটি অবৈধ টাকা পাওয়া যাবে। আমরা এলাকাবাসী দুদক সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দিগন্ত সমাজ কল্যান সমিতির পরিচালক শামসুন্নাহার মুক্তা এসব অভিযোগ বিষয়ে বলেন, আমার কোন সম্পদ নাই। যতোটুকু করেছি আমার পরিশ্রমের টাকায় করেছি।