মুক্ত চেতনা ডেস্ক : সাবেক সংসদ সদস্য, পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ পাবনা জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন এফএফ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু শনিবার (২৮’ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে পাবনার শিমলা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে এবং আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শনিবার (২৮’ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় বীর ম্ুিক্তযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুর পৌর মুক্তমঞ্চ (সাবেক টাউনহল ময়দান) মাঠে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) প্রদানের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু’র প্রথম জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা আওয়মী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, জেলা আওয়মীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বাবু, পৌর মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, বীর মুক্তযোদ্ধা বেবী ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম কামরুল ইসলাম ফুটু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনুর রহমান বরুণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী জব্বার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান সাচ্চুসহ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এছাড়াও পাবনার জেলা পরিষদ, পৌরসভা, নাগরিক মঞ্চ এবং মুক্তিযোদ্ধ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপর বাদ মাগরিব পাবনার ঐতিহাসিক চাঁপা মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পাবনা জেলা শহরের আরিফপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু ১৯৪৩ খ্রি. ৩রা জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মাঝগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ কে এম মনসুর আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি ১৯৬৩ খ্রি. আর এম একাডেমি, পাবনা থেকে এসএসসি, ১৯৬৫ খ্রি. পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭২ খ্রি. স্নাতক পাস করেন। ১৯৬৭-র ভুট্টা আন্দোলন এবং ৬৯-র গণ-অভ্যুত্থানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং সেই সময়ে পুলিশি নির্যাতন ও কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ খ্রি. পাবনা-২ আসন (সুজানগর) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ খ্রি. পর্যন্ত তিনি পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ খ্রি. মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীয় সময় যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত যান এবং সেখানকার বিহার রাজ্যের চাকুলিয়াতে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে ৭ নম্বর সেক্টরের অধীন রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাবনার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে মিলিশিয়া ক্যাম্প গঠন করা হয়েছিল তিনি সেই ক্যাম্পের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ নাদিরা ইয়াসমীন জলি, জেলা পরিষদের মোহাম্মদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, পৌর মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’ ৭১ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও পাবনা জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তযোদ্ধা আ. স. ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, দৈনিক সিনসার সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম, জেলার মুক্তিযোদ্ধাগনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।